ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী ভ্রমণ একঘেয়েমির জীবনটাকে সচ্ছল ও আনন্দদায়ক করে তোলার জন্য সেরা একটি জায়গা। ড্রিম হলিডে পার্ক ঠিক এমনই একটা জায়গা, যেখানে একদিনের জন্য হলেও সব ভুলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে পারবেন। গাজীপুরের কাছে ঢাকা থেকে অল্প দূরেই যেন অপেক্ষা করে এক স্বপ্নের দুনিয়া, যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে হাত ধরাধরি করে মজা আর শান্তি। ভেতরে ঢুকলেই দেখবেন এক এক করে হাজির হবে রাইড, সুইমিং পুল, সবুজ মাঠ, আর বাচ্চাদের খেলার জায়গা। সব বয়সের জন্যে আলাদা কিছু আছে এখানে। আপনি যখন চুপচাপ ঝর্ণার ধারে বসে থাকবেন, তখন জীবনের চাপগুলোও হয়তো কোথাও হারিয়ে যাবে। ড্রিম হলিডে পার্ক এমনই এক স্বপ্ন, যেখানে বাস্তবতার থেকেও সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটানো যায়।
ড্রিম হলিডে পার্কের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং বৈশিষ্ট্য
নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কের গল্পটা শুরু হয় এক স্বপ্ন নিয়ে – এমন এক জায়গা তৈরি করা যেখানে মানুষ জীবনের একঘেয়েমি থেকে একটু মুক্তি পাবে। গাজীপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সুনিপুণ পরিকল্পনায় তৈরি এই পার্কের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে আছে মজার সব আয়োজন। এখানে আসলে মনে হয়, প্রকৃতির বুকে হারিয়ে গেছি। ছোটদের জন্য রঙিন রাইড থেকে শুরু করে বড়দের জন্য ওয়াটার স্লাইড, অ্যাডভেঞ্চার জোন – প্রতিটি মুহূর্ত যেন আনন্দে ভরা। সবুজের মাঝে পরিবার আর বন্ধুদের সঙ্গে একদিন কাটানোর জন্য ড্রিম হলিডে পার্কই সেরা। শান্তি, রোমাঞ্চ আর প্রকৃতির ভালোবাসায় মোড়া এই জায়গা যেন এক জীবন্ত স্বপ্ন।
বিষয় | তথ্য |
ভ্রমণের স্থান | ড্রিম হলিডে পার্ক |
আয়তন | প্রায় ৩০ একর |
জায়গার ধরন | থিম পার্ক, ওয়াটার পার্ক, ও সাফারি পার্ক |
অবস্থান | চৈতাব, নরসিংদী, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন |
মালিকানা | ব্যক্তিগত |
পরিচিত নাম | ড্রিম হলিডে পার্ক |
ঢাকা থেকে দূরত্ব | প্রায় ৫০ কিলোমিটার |
ভ্রমণের সময়সূচি | প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (টিকিট কাটার শেষ সময়: সন্ধ্যা ৬টা) |
যাতায়াত ব্যবস্থা | বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, লোকাল ট্রেন |
প্রবেশ ফি | প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২৫০ টাকা (ওয়াটার পার্ক: ৩৫০ টাকা, রাইড প্রতি ৬০-১১০ টাকা) |
প্রধান জেলা থেকে দূরত্ব | নরসিংদী শহর থেকে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার |
ড্রোন উড়ানো যাবে কি? | পার্কের নীতিমালায় ড্রোন ব্যবহারের বিষয়টি উল্লেখ নেই; কর্তৃপক্ষের অনুমতি প্রয়োজন |
“প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর রোমাঞ্চকর রাইডের মেলবন্ধন – ড্রিম হলিডে পার্ক আপনার পরিপূর্ণ বিনোদনের ঠিকানা।”
ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী ভ্রমণে যাবার পর বিশেষ করে কি কি অবশ্যই দেখা উচিত?
ওয়াটার কিংডম
ড্রিম হলিডে পার্কের ওয়াটার কিংডমে ঢুকলেই যেন মনে হয়, প্রকৃতির মাঝে পানির সঙ্গে খেলার সুযোগ হাতে চলে এসেছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার স্লাইড, স্প্ল্যাশ পুল, ওয়াটার সুইং এবং সুইমিং পুলের ব্যতিক্রমী ডিজাইন দেখা যায়। গরমের দিনে ওয়াটার কিংডমে নেমে ঠান্ডা পানির স্পর্শ পাওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা যেন শরীর-মনের সব ক্লান্তি মুছে দেয়। ছোট থেকে বড় সবার জন্যে ওয়াটার স্লাইডের আলাদা ব্যবস্থা থাকায় সবাই নিজের মতো করে আনন্দ করতে পারে। পরিবারের সবাই মিলে পানির ছিটায় মেতে ওঠা কিংবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ওয়াটার পুলে ঢেউয়ের মাঝে লাফিয়ে লাফিয়ে সময় কাটানো যেন অন্যরকম এক আনন্দ। শুধু সাঁতার নয়, এখানে ওয়াটার সুইং ও স্প্রিং পুলের চারপাশের সবুজ ও পরিষ্কার পরিবেশ পুরোদিনের ক্লান্তি মুছে দেয়। ড্রিম হলিডে পার্কে এসে ওয়াটার কিংডমে সময় কাটানো একদমই মিস করা উচিত নয়।
প্যাডেল বোট
ড্রিম হলিডে পার্কের প্যাডেল বোট। এক অসাধারণ অনুভূতি। যেন জলের মধ্যে দিয়ে একটা অদ্ভুত শান্তি বয়ে চলে। পুরো শরীরের ক্লান্তি একটুও থাকলে, সেখানেই লুকিয়ে থাকে বিশ্রামের আসল স্বাদ। প্যাডেল বোটের প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতে, কখন যেন মনে হয়, তুমি নিজেই এক টুকরো জল। চারপাশে গাছপালা, আর সেখান থেকে ছিঁটে পড়া রোদ্দুর, জলের ওপর সোনালি আলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। আর তুমি একা নও, সাথে পরিবার, বন্ধু—সবাই একসাথে। একটা অদ্ভুত আনন্দে ভরে ওঠে মন। কল্পনা আর বাস্তবতার মিশেলে, সবকিছু যেন এক হয়ে যায়। শান্ত, নিরিবিলি এই মুহূর্তে, পৃথিবীর সব কষ্ট ভুলে যাওয়ার এক অনন্য সুযোগ।
বাম্পার কার
ড্রিম হলিডে পার্কের বাম্পার কার রাইড যেন একধরনের মুক্তি।চারপাশে বাচ্চাদের হাসি, বড়দের চিৎকার আর রঙিন আলোয় মাখা একটা অন্যরকম জগৎ। আপনি গাড়িতে উঠবেন, হালকা কম্পন অনুভব করবেন। তারপর শুরু হবে ধাক্কাধাক্কির খেলা। আপনার সামনের গাড়িটা প্রথমে খুব শান্ত মনে হবে। আপনি ভাববেন, ‘ধাক্কা দেব কী?’ তারপর এক লহমায় পেছন থেকে কেউ আপনার গাড়িকে ধাক্কা দেবে, আর তখনই শুরু হবে সত্যিকারের রোমাঞ্চ। আপনার ভেতরটা একসঙ্গে কাঁপবে আর হাসবে।
রোলার কোস্টার
ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদীর রোলার কোস্টার। প্রথমবার যখন যদি চড়েন, মনে হবে পৃথিবী থেমে গেছে। ট্র্যাকের উপরে উঠতে উঠতে মনটা এক ধরনের উত্তেজনায় ভরে ওঠে, আর তারপর ঝটপট নিচে নামতে গিয়ে বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত ঝড় ওঠে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, পৃথিবী উল্টে যাচ্ছে। কিন্তু সেই অনুভূতি যেন এক ধরনের মুক্তি, এক ধরনের আনন্দ, যেখানে ভয়ও আনন্দের অংশ হয়ে ওঠে। রোলার কোস্টারের প্রতিটি বাঁক মনে করিয়ে দেয় জীবনের অপ্রত্যাশিত মোড়।
আদর্শ গ্রাম
ড্রিম হলিডে পার্কের আদর্শ গ্রাম দর্শনার্থীদের জন্য গ্রামীণ জীবনের একটি প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় উপস্থাপনা। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতি, জীবনযাপন, এবং কৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা দেয়। এখানে মাটির ঘর, খোলা উঠোন, দোলনা, পুকুরঘাট, গ্রামীণ হাট এবং গাছপালার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সরল জীবনধারা উপলব্ধি করতে পারবেন। শহুরে জীবনের কোলাহল থেকে দূরে এই স্থানটি আপনাকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে এনে মানসিক প্রশান্তি দেয়। বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে “আদর্শ গ্রাম” অবশ্যই দেখা উচিত।
জাহাজে ভাসমান রেস্টুরেন্ট
ড্রিম হলিডে পার্কের জাহাজে ভাসমান রেস্টুরেন্ট দর্শনার্থীদের জন্য একটি অনন্য এক অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এটি শুধুমাত্র খাবার উপভোগের স্থান নয়, বরং পানির ওপর ভেসে থাকা একটি জাহাজে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার একটি দুর্দান্ত সুযোগ। রেস্টুরেন্টটি আধুনিক সাজসজ্জা এবং বৈচিত্র্যময় মেনু নিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানায়, যেখানে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবারের স্বাদ পাওয়া যায়। শান্ত পানির মধ্যে নৌকার মতো ভেসে থাকার অনুভূতি এবং পার্কের দৃশ্যাবলী উপভোগ করার জন্য এই রেস্টুরেন্টটি অবশ্যই দেখা উচিত। এটি পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ এক স্থান হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।
মিনি পদ্মা সেতু
ড্রিম হলিডে পার্কের মিনি পদ্মা সেতু একটি দর্শনীয় আকর্ষণ, যা বাংলাদেশে নির্মিত প্রকৃত পদ্মা সেতুর একটি ছোট সংস্করণ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা আসল সেতুর সৌন্দর্য এবং স্থাপত্য কৌশল উপভোগ করতে পারেন। এখানে উঠলে এর চারপাশের পরিবেশ এবং পানির ওপর দিয়ে চলার অনুভূতি এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। এটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছবি তোলা এবং সুন্দর সময় কাটানোর জন্য একটি আদর্শ স্থান। বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক এই সেতুর ছোট সংস্করণটি দেখার জন্য ড্রিম হলিডে পার্কে ভ্রমণ অবশ্যই করা উচিত।
হরিণের মিনি চিড়িয়াখানা
ড্রিম হলিডে পার্কের হরিণের মিনি চিড়িয়াখানা একটি মনোমুগ্ধকর স্থান, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির সুন্দর হরিণদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ মেলে। চিড়িয়াখানার পরিবেশটি এতটাই সুরম্য যে এটি দর্শনার্থীদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এখানে হরিণদের অবাধে ঘুরে বেড়াতে এবং তাদের খেলার মজার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। শিশুদের জন্য এটি বিশেষ আকর্ষণীয়, কারণ তারা প্রাণীদের সম্পর্কে জানতে এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো এবং সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করার জন্য এই মিনি চিড়িয়াখানা একটি দুর্দান্ত স্থান। প্রাণীপ্রেমীদের জন্য এটি একটি অবশ্যই ঘুরে দেখার মতো স্থান।
স্কাই ট্রেন
ড্রিম হলিডে পার্কের স্কাই ট্রেন। যেন আকাশের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাওয়ার এক জাদুর খেলনা। আপনি জানেন, আমরা যারা মাটির মানুষ, তাদের জন্য আকাশে চলার অভিজ্ঞতা কল্পনার চেয়েও মধুর। এই স্কাই ট্রেন আপনাকে সেই কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে। ট্রেনটি মাটি থেকে বেশ খানিকটা ওপরে, যেন আপনি পৃথিবী ছুঁয়ে থাকবেন, কিন্তু সেই মাটি আর আপনাকে আঁকড়ে ধরতে পারবে না। যখন ট্রেন ধীরে ধীরে পার্কের ওপর দিয়ে চলবে, আপনি হয়তো ভাববেন, “এমন জীবন যদি আরেকটু বেশি পেতাম!” এই স্কাই ট্রেন শুধু একটি রাইড নয়, এটি একটি স্বপ্ন।
৯ডি মুভি
ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী তে ৯ডি মুভিটা এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। মনে হয় যেন বাস্তব আর কল্পনার মাঝখানে কোথাও ঝুলে আছি। চোখের সামনে তিন-চারটে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য ভেসে উঠছে, আর তার সঙ্গে হাওয়ার ঝাপটা, পানির ছিটা, গা ছমছমে শব্দ—সব মিলিয়ে যেন গল্পের ভেতর ঢুকে পড়ার মতো অনুভূতি। ৯ডি মুভিতে সব ইন্দ্রিয় একসঙ্গে কাজ করে। আমি বসে আছি, কিন্তু মনে হয় যেন আসলেই আমি কোনো অজানা অভিযানে বেরিয়েছি।
বাচ্চাদের প্লে জোন
ড্রিম হলিডে পার্কের কিডস জোনটি ছোটদের জন্য এক রোমাঞ্চকর দুনিয়া। এখানে রয়েছে শিশুদের জন্য আলাদা স্লাইড, সুইং, এবং ছোট ছোট রাইডের ব্যবস্থা- মিনি ট্রেন, যেখানে বাচ্চারা তাদের নিজস্ব আনন্দে মেতে উঠতে পারে। নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখে কিডস জোনটি ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ছোটরা মনের আনন্দে খেলতে পারে। বাচ্চারা এখানে তাদের পছন্দ মত রাইড উপভোগ করতে পারবে পুরো নিরাপদ ভাবে। পার্কের এই প্লে জোনে বাচ্চাদের কাছে থ্রিলিং এক অনুভুতি দিবে যা তাদের বাস্তব জীবনে অনুশীলনমূলক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। ড্রিম হলিডে পার্কে বাচ্চাদের প্লে জোনটি যেন তাদের নিজস্ব এক স্বপ্নের জগৎ।
স্পিড বোটে ঘুরাঘুরি
ড্রিম হলিডে পার্কের স্পিড বোট রাইড দর্শনার্থীদের জন্য এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, যেখানে দ্রুতগতিতে পানির ওপর দিয়ে ছুটে চলার সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আধুনিক স্পিড বোট, সুরক্ষিত লাইফ জ্যাকেট এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদের উপস্থিতি এই রাইডকে নিরাপদ ও উপভোগ্য করে তোলে, যা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
এয়ার বাইসাইকেল
ড্রিম হলিডে পার্কের এয়ার বাই সাইকেল রাইড একটি অনন্য অভিজ্ঞতা, যেখানে দর্শনার্থীরা মাটির ওপরে উঁচু ট্র্যাকে সাইকেল চালানোর শিহরণ উপভোগ করতে পারেন। নিজ পায়ের শক্তি ব্যবহার করে এই সাইকেল চালানো হয়, যা একদিকে বিনোদন এবং অন্যদিকে শরীরচর্চার সুযোগ দেয়। সাইকেলের সঙ্গে সুরক্ষিত বেল্ট ও গিয়ার থাকায় এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। উঁচু থেকে চারপাশের সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পার্কের সৌন্দর্য উপভোগের এই রাইড অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
বুলেট ট্রেন
ড্রিম হলিডে পার্কের বুলেট ট্রেন রাইড যেন বাস্তবের গতির সীমানা পেরিয়ে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। রাইডের শুরুতেই মনে হবে, আপনি যেন কোনো ভবিষ্যতের দুনিয়ায় আছেন। ট্রেনের ভেতরে বসা মাত্রই গতি আপনার শরীর আর মনের ওপর দখল নেবে। চারপাশে দৃশ্যগুলো এত দ্রুত পাল্টায় যে চোখের পলক ফেলতেও ভয় হয় কিছু মিস করবেন। ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী এর এই টানেলের অন্ধকারে ঢুকে মনে হবে, শ্বাস আটকে আসছে। হঠাৎ আলোর ঝলক, তারপর বিশাল এক শহর পেরিয়ে যাবেন আপনি। কখনো পাহাড়ের ওপর দিয়ে, কখনো গভীর সাগরের পাশ দিয়ে ছুটে চলা। প্রতিটি বাঁক আর মোচড়ে মনে হবে, আপনি শুধু যাত্রী নন, এই অভিযানের অংশ।
ক্যাবল কার
ড্রিম হলিডে পার্কের ক্যাবল কার রাইড দর্শনার্থীদের জন্য একটি রোমাঞ্চকর এবং মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা। এটি পার্কের ওপরে থেকে সবুজ পরিবেশ, সাজানো ল্যান্ডস্কেপ এবং বিভিন্ন আকর্ষণ উপভোগ করার সুযোগ দেয়। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত এই ক্যাবল কারগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং আরামদায়ক, যা পরিবার এবং শিশুদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। উপরে থেকে পুরো পার্ককে বার্ড আই অর্থাৎ পাখির নজরে দেখা যায়। উঁচুতে ভ্রমণের শিহরণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করার জন্য ক্যাবল কার রাইড এখানে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
কাইট ফ্লাইং
ড্রিম হলিডে পার্কের কাইট ফ্লাইং রাইড একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকে। এটি মূলত একটি বিশেষধরনের রাইড যেখানে যাত্রীদের ঘুড়ির মত সিটে বসিয়ে দেওয়া হয় সেখানে বসিয়ে তারপর রাইডটি চালু করে দেওয়া হয়। যাত্রীদের উড়ার মত অনুভুতি দেওয়ার জন্য মূলত এই রাইড। উপরে উঠার পর যাত্রীরা চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে পারে। রাইডটি থ্রিল ও মজা একসাথে দিয়ে থাকে।
ভুতের বাড়ি
ড্রিম হলিডে পার্কের ভূতের বাড়ি শুধু বাড়ি নয়, এ যেন এক অন্য জগতে ঢোকার দরজা। প্রবেশ করলেই চারপাশে অদ্ভুত সুনসান নীরবতা। মনে হয়, কেউ খুব কাছ থেকে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না। হঠাৎ করেই অন্ধকারে ফিসফিস শব্দ। দেওয়াল থেকে ভেসে ওঠা ছায়াগুলো যেন ধীরে ধীরে আপনার দিকে এগিয়ে আসছে। পায়ের তলায় মেঝেটা কি কেঁপে উঠল? কে জানে! তারপর একটা কর্কশ হাসির শব্দ, যা আপনার হৃৎপিণ্ডকে মুহূর্তে থমকে দিতে পারে। এই বাড়িতে প্রতিটি দরজা, প্রতিটি করিডোর আপনাকে বিভ্রান্ত করবে। আপনি জানেন, এটা রাইড, কিন্তু কোথাও একটা সত্যি-সত্যি ভয় লুকিয়ে আছে। সেটা অনুভব করবেন গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাওয়ার প্রতিটি মুহূর্তে।
শান্ত ঝর্ণা ও ফোয়ারা
ড্রিম হলিডে পার্কে ঢুকলেই চোখে পড়ে শান্ত ঝর্ণা আর ফোয়ারা, যা যেন আপনাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বাদ দেয়। ফোয়ারার পাশে বসে থাকা মানেই প্রকৃতির সান্নিধ্য আর প্রশান্তির এক ভিন্নতর অনুভূতি। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সবুজ গাছ আর ঠান্ডা বাতাসের মাঝে ঝর্ণার কুলকুল শব্দ মনকে নিরিবিলি করে দেয়। অনেকেই এখানে এসে ছবি তোলেন, কেউ কেউ আবার পরিবারের সঙ্গে মজার মুহূর্ত কাটান। ঝর্ণার পানির ছিটায় শরীর-মনের ক্লান্তি যেন মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়। এই ফোয়ারার পাশে সময় কাটানো মানে হলো প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া।
ফ্যামিলি পিকনিক স্পট
পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ড্রিম হলিডে পার্কের ফ্যামিলি পিকনিক স্পটটি একেবারে উপযুক্ত জায়গা। এখানকার প্রশস্ত সবুজ লন, বড় ছায়াদার গাছ, আর মেঠো বাতাস যেন মনকে আরও বেশি প্রফুল্ল করে তোলে। পার্কের পিকনিক স্পটে রয়েছে খাওয়ার জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা এবং খাবারের স্টল, যেখানে স্বাস্থ্যকর ও মজাদার খাবার পাওয়া যায়। চাইলে নিজে রান্না করেও খেতে পারেন, কারণ এখানে পিকনিকের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা এবং সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদীতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে গল্পে মেতে ওঠা কিংবা ছোট্টরা যখন আশপাশে দৌড়ে বেড়ায়, তখন সেই মুহূর্তগুলো আরও বেশি সুন্দর হয়ে ওঠে।
ঢাকা থেকে কিভাবে ড্রিম হলিডে পার্কে যাবেন তার একাধিক বর্ণনা
বাসে যাত্রা
ঢাকার গুলিস্তান বা আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরমুখী বাস সহজেই পাওয়া যায়। সেখান থেকে শিববাড়ি পর্যন্ত বাসে যেতে লাগবে মাত্র ৫০-৭০ টাকা। শিববাড়ি থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা নিয়ে সরাসরি চলে যান ড্রিম হলিডে পার্কে, খরচ পড়বে প্রায় ১৫০-২০০ টাকা।
প্রাইভেট কারে যাত্রা
ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে যেতে চাইলে ধানমন্ডি, গুলশান, মিরপুর থেকে শুরু করে সব জায়গা থেকে রাস্তায় উঠতে পারবেন। গাজীপুরের দিকের রাস্তাটা বেশ সরল, তাই পথে গাড়ি চালাতে চালাতে মনেই হবে না, ঢাকার বাইরে চলে এসেছেন। পেট্রোলের খরচ মিলে আনুমানিক ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে যাওয়া-আসা হয়ে যাবে।
বাইক ভ্রমণ
অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য বাইকে যাওয়াটা হবে মজার এক অভিজ্ঞতা। ঢাকার কোলাহল পেরিয়ে গাজীপুরের গ্রামের দিকে বাইক চালানোর মজাই আলাদা। বাইকের পেট্রোল খরচ পড়বে ৫০০-৭০০ টাকার মতো। বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে গেলে পুরো পথটাই হয়ে উঠবে উত্তেজনাপূর্ণ।
বিমানে যাত্রা
এটি একটু কৌতুকের মতো শোনালেও, মনে করুন ঢাকার আকাশ থেকে প্লেন নিয়ে ড্রিম হলিডে পার্কে চলে যাবেন! আসলে গাজীপুরে যাওয়ার জন্য বিমানের প্রয়োজন নেই; এটি ঢাকার খুব কাছে। তবে আপনি চাইলে হেলিকপ্টার সার্ভিসও নিতে পারেন বিশেষ কোনো উপলক্ষ্যে। এটি অবশ্যই একটু ব্যয়বহুল হবে, তবে একটা দিনকে স্মরণীয় করতে হলে এমন অভিজ্ঞতা জীবনেও ভোলা যাবে না!
ড্রিম হলিডে পার্কের কেন্দ্রিক ভালো খাবার কি কি ও প্রাইস কেমন পড়তে পারে
বারবিকিউ প্লাটার : গরম গরম বারবিকিউ, তার সঙ্গে নরম নান আর সসের সমারোহ। দাম পড়বে প্রায় ৫০০-৬০০ টাকা। পার্কের সবুজের মাঝে বসে বারবিকিউর গন্ধটা যেন আলাদা সুখ এনে দেয়।
চাইনিজ সেট মেনু : ভ্রমণের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়ার মতো এই চাইনিজ সেটে থাকে ফ্রাইড রাইস, চিকেন চিলি আর একটু স্যুপ। দামটা একটু বেশি, ৪০০-৫০০ টাকা, তবে মান বেশ ভালো। মনে হবে যেন কোনো অভিজাত রেস্তোরাঁয় বসে আছেন।
পিৎজা ও বার্গার : বাচ্চাদের মন জয় করতে চাইলে অবশ্যই পিৎজা আর বার্গার ট্রাই করা উচিত। ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদীতে মাঝারি সাইজের পিৎজা ৩০০-৪০০ টাকা আর বার্গার ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
চটপটি-ফুচকা : পার্কের ছোট ফুড কোর্টে মজাদার চটপটি আর ফুচকাও পাওয়া যায়, যার দাম ৫০-১০০ টাকা। খোলা হাওয়ায় চটপটির স্বাদে যেন নতুন প্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়।
ড্রিম হলিডে পার্কে এসে কোথায় থাকবেন, হোটেল এর গুগল ম্যাপ লিঙ্ক কন্টাক্ট নাম্বার সহ
হোটেলের নাম | কন্টাক্ট নাম্বার | গুগল ম্যাপের লিংক |
নিরালা হোটেল | 01607947037 | https://maps.app.goo.gl/jf3EbtFkuRPG53ik7 |
হোটেল রিলাক্স | 01322270380 | https://maps.app.goo.gl/Pxa1ufyjvmZSVe6Q8 |
হোটেল সোনার বাংলা | 01736228300 | https://maps.app.goo.gl/T44P8AkBdwcksjR86 |
ড্রিম হলিডে পার্ক এর স্থানীয় ঐতিহ্য, উৎসব, এবং রীতি-নীতির তথ্য
ড্রিম হলিডে পার্কের চারপাশে আপনি যখন চলতে চলতে থামবেন, তখন স্থানীয় ঐতিহ্য, উৎসব, আর রীতি-নীতি যেন আপনাকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে। এখানে আসলে আপনি কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই দেখতে পাবেন না, বরং লোকজ সংস্কৃতিরও স্পর্শ পাবেন। বিশেষ করে যেহেতু এটি গাজীপুর অঞ্চলের অন্তর্গত, তাই এখানে এলাকার বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে পারবেন।
প্রতিবছর এখানে অনুষ্ঠিত হয় নানা ধরনের মেলা ও উৎসব, যেমন পহেলা বৈশাখ বা দুর্গাপূজার সময় বিশেষ আয়োজন থাকে। এই উৎসবগুলোতে স্থানীয় জনগণের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায়। এলাকার বাসিন্দারা তাদের প্রাচীন রীতি-নীতি, গান, আর খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করে। এছাড়া, তাদের মধ্যে এক ধরনের বন্ধনও গড়ে ওঠে—পার্কের ভেতরে আড্ডা দেওয়া, মাছ ধরা, বা বিকেল বেলা চায়ের সাথে গল্প করা যেন এক বিশেষ রীতিতে পরিণত হয়েছে।
এই পুরো পরিবেশটিতে ঢুকে গেলে, যেন মনে হয়, এখানে সময়টা একটু থমকে দাঁড়িয়েছে, আর আপনি নিজেও এই ঐতিহ্য, উৎসব, এবং স্থানীয় মানুষের প্রাণবন্ত রীতির অংশ হয়ে গেছেন।
ড্রিম হলিডে পার্ক কোন সময় ভ্রমণ করা উচিত এবং কোন সময় উচিত না
যাবার সেরা সময়
শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) : শীতের সময়ে পার্কে ভ্রমণ করা আদর্শ। ঠান্ডা আবহাওয়া, পরিষ্কার আকাশ, এবং প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দিবে। এই সময়ে সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে চাইলে শীতকাল আপনার জন্য সেরা সময়।
বর্ষাকাল শেষে (সেপ্টেম্বর – অক্টোবর) : বর্ষাকাল শেষে গ্রীষ্মের আগমনের আগে পার্কে ভ্রমণ করলে মেঘলা আকাশ এবং সতেজ পরিবেশে সময় কাটাতে পারবেন। বৃষ্টির পর ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী এর প্রকৃতি যেন নতুন করে জেগে উঠে, আর সেই দৃশ্য দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
ভুল সময়ে যাওয়া উচিত নয়
গ্রীষ্মকাল (মার্চ – মে) : গ্রীষ্মের তীব্র গরমে পার্কের বাইরে বেড়ানো একটু কষ্টকর হতে পারে। প্রখর রোদ এবং উচ্চ তাপমাত্রা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলবে। বিশেষ করে যদি আপনি পানি এবং ছায়ায় না থাকেন, তবে ভ্রমণটা কিছুটা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
বর্ষাকাল (জুন – আগস্ট) : বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট ভিজে থাকে, এবং অনেক রাইড বন্ধ থাকতে পারে। ভারী বৃষ্টি আপনাকে অতিরিক্ত ভেজা করে ফেলবে, এবং আপনার মনের সুখটুকু কেড়ে নেবে।
ড্রিম হলিডে পার্কে এসে মেডিকেল ইমারজেন্সি হলে কোথায় যাবেন গুগল ম্যাপের লিঙ্ক সহ কন্টাক্ট নাম্বার
হাসপাতালের নাম | কন্টাক্ট নাম্বার | গুগল ম্যাপের লিংক |
নরসিংদী ডায়াবেটিক এন্ড জেনারেল হাসপাতাল | 01911553572 | https://maps.app.goo.gl/Lq1Qo5advHBFudPVA |
নরসিংদী সদর হাসপাতাল | 01734778507 | https://maps.app.goo.gl/fD4boAdyWTHxqdBN6 |
সেন্ট্রাল হাসপাতাল | 01924242413 | https://maps.app.goo.gl/NdyQVJuW7GZjFvL88 |
ড্রিম হলিডে পার্কে ট্রাভেল করতে হলে বা ট্যুর প্লান করতে হলে কি কি বিষয়ে সতর্ক থাকা লাগবে
মৌসুমি আবহাওয়া : পার্কে যাওয়ার আগে আবহাওয়ার খবর দেখে নিন। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা অনেক বেশি হতে পারে, আর বর্ষাকালে বৃষ্টির কারণে রাস্তা ভিজে থাকতে পারে। শীতকাল সবচেয়ে ভালো সময়।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া : পানির বোতল, সানস্ক্রিন, ছাতা বা ক্যাপ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে গরম বা বৃষ্টির সময়। এই ছোট ছোট প্রস্তুতি ভ্রমণকে অনেক সহজ এবং আরামদায়ক করে তোলে।
পার্কের সময়সূচী ও সাপ্তাহিক ছুটি : পার্কের কিছু রাইড বা সেবা বন্ধ থাকতে পারে যদি আপনি সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা উৎসবের সময় যান। সুতরাং, আগে থেকেই ফোন করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
টিকেট এবং লাইন : ছুটির দিনগুলোতে পার্কে ভীড় বেশি থাকতে পারে, তাই আগেভাগে টিকেট কিনে ফেলা ভালো। এটি সময় বাঁচায় এবং আপনাকে কোনো অস্বস্তিতে পড়তে দেয় না।
খাবার ও পানি : পার্কে খাবার একটু বেশি দামি হতে পারে, তাই নিজের কিছু খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। তবে, নিশ্চিত করুন যে খাবার পরিবহনযোগ্য এবং তাজা।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার : পার্কে ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও ধারণের অনুমতি থাকে, তবে কিছু জায়গায় ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ হতে পারে। তাই আগে থেকে পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নিন।
স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা : ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদীতে আসার আগে কোন ধরনের অ্যালার্জি বা চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা নিয়ে সতর্ক থাকুন এবং পার্ক কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রাখুন। জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা সম্পর্কে আগে থেকে তথ্য জেনে রাখুন।
ড্রিম হলিডে পার্ক ভ্রমণ নিয়ে এখন পর্যন্ত মানুষের রেটিং ও রিভিউ
ড্রিম হলিডে পার্ক (নরসিংদী) গুগলে ৪.৩ রেটিং পেয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে পার্কের সুবিধা ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। বেশিরভাগ রিভিউ ইতিবাচক, যেখানে পার্কের আকর্ষণীয় রাইডস, ওয়াটার পার্ক এবং পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে কিছু রিভিউতে পার্কের প্রবেশ ফি, রাইডের খরচ এবং ভিড় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এই পার্কটি একটি পরিবার-বান্ধব গন্তব্য হিসেবে পরিচিত, যেখানে বাচ্চাদের জন্য খেলাধুলার পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও বিভিন্ন রাইড রয়েছে। এছাড়া, পার্কের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ দর্শকদের কাছে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
ড্রিম হলিডে পার্ক ভ্রমণের স্পেশাল টিপসগুলো?
পানির প্রস্তুতি
গরমে পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সময় হাইড্রেটেড থাকা খুবই জরুরি। তাই নিজের পানির বোতল নিয়ে যেতে ভুলবেন না। অনেক সময় পার্কে খাবার ও পানির দাম একটু বেশি হতে পারে, তাই প্রস্তুত থাকলে ভালো হয়।
অফ-পিক সিজনে ভ্রমণ করুন
ছুটির দিন বা সপ্তাহান্তে পার্কে ভীড় বেশি থাকে, তাই যদি আপনি কিছুটা নিরিবিলি ভ্রমণ করতে চান, তবে অফ-পিক সিজনে বা সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন। এতে আপনি আরও বেশি উপভোগ করতে পারবেন।
ফাস্ট ট্র্যাক টিকেট কিনুন
পার্কের কিছু রাইডে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তাই যদি আপনি সময় বাঁচাতে চান, তবে ফাস্ট ট্র্যাক টিকেট কিনে রাইডগুলো দ্রুত উপভোগ করতে পারেন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
তীব্র রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে গরমের দিনে। তাই যেকোনো রাইডে ওঠার আগে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
ফোনের ব্যাটারি চার্জ রাখুন
ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও ধারণ করার জন্য ফোনের ব্যাটারি সারা দিনে শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই ব্যাটারি প্যাক নিয়ে যান অথবা কিছু সেন্টারে চার্জিং সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলো ব্যবহার করুন।
বাচ্চাদের জন্য প্রস্তুতি নিন
বাচ্চাদের জন্য বিশেষ কিডস জোন থাকে, তবে যদি আপনার বাচ্চা ছোট হয়, তাহলে তাদের খাওয়ার, পানির এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসুন। এতে ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী ভ্রমণ আরও মসৃণ হবে।
জরুরি চিকিৎসা প্রস্তুতি
ছোটখাটো আহত বা অস্বস্তির জন্য পার্কে কিছু চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে, তবে যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তাহলে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে আসুন।
পার্ক থেকে ফেরার পথে কি কি করতে পারেন?
ড্রিম হলিডে পার্ক থেকে ফেরার পথে অনেক কিছুই করা যায়, যা পুরো সফরটিকে আরও স্মরণীয় করে তুলতে পারে। যেমন ধরুন, পার্কের কাছাকাছি থাকা স্থানীয় বাজারে ঘুরে দেখুন। সেখানে ছোট ছোট দোকান থেকে হাতে তৈরি সস্তা এবং সুন্দর উপহার কিনে নিয়ে আসতে পারেন। গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প বা স্থানীয় খাবারগুলোর মধ্যে ডুব দিয়ে যেতে যেতে আপনি একটা নতুন অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
আরেকটি দারুণ পরিকল্পনা হতে পারে, পার্ক থেকে ফেরার পথে গাজীপুর শহরের কাছাকাছি কোনো শান্ত জায়গায় এক কাপ চা বা কফি পান করা। একে তো পুরো দিনজুড়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, তার উপর এক কাপ চা হাতে খোলা আকাশের নিচে কিছু সময় কাটানো। যেনো দিনটি এক টুকরো শান্তির পরিসমাপ্তি পেলো।
ফেরার পথে যদি সময় থাকে, তাহলে পার্কের আশপাশের প্রকৃতি, নদী বা ছোট পাহাড়ি এলাকা ঘুরে আসতে পারেন। কিছুটা সময় একাকী অথবা পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নীরবতা উপভোগ করলে, তা আপনার মনকে শান্তি এনে দেবে।
এমন ছোট ছোট অভিজ্ঞতাই পুরো ট্রিপটিকে আরও ভালো স্মৃতিতে পরিণত করতে সাহায্য করবে।
ড্রিম হলিডে পার্ক নিয়ে কিছু কমন প্রশ্ন ও উত্তর
১. ড্রিম হলিডে পার্ক কোথায় অবস্থিত?
ড্রিম হলিডে পার্ক গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায়, ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
২. পার্কে ঢোকার টিকেটের দাম কত?
টিকেটের দাম ঋতু এবং দিনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ভিজিটরের জন্য প্রাপ্তি হবে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।
৩. পার্কে কোন সময় গেলে ভালো হবে?
শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) পার্ক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। গরমে তাপমাত্রা বেশী থাকে এবং বৃষ্টির সময় রাইডগুলো বন্ধ থাকতে পারে।
৪. পার্কে কোন ধরনের রাইড রয়েছে?
পার্কে ওয়াটার রাইড, অ্যাডভেঞ্চার রাইড, ফ্যামিলি রাইড এবং বাচ্চাদের জন্য বিশেষ রাইড রয়েছে।
৫. কি ধরনের খাবার পাওয়া যায়?
পার্কের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন ফাস্ট ফুড, চটপটি, বার্গার, পিজ্জা, ইত্যাদি পাওয়া যায়।
৬. ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদীতে বাচ্চাদের জন্য কি সুবিধা আছে?
হ্যাঁ, পার্কে বাচ্চাদের জন্য আলাদা প্লে জোন এবং ছোটদের জন্য বিভিন্ন রাইড রয়েছে যা তারা উপভোগ করতে পারে।
৭. পার্কে গেলে বাথরুম কিভাবে করা যাবে?
পার্কের ভেতর ভ্রমণকারীদের জন্য পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা আছে সেখানে যেতে পারেন।
৮. পার্কে কি গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে?
হ্যাঁ, পার্কের ভেতরে ও বাইরের দিকে পর্যাপ্ত পার্কিং স্পেস রয়েছে।
৯. পার্কে কোন বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসব আয়োজন করা হয় কি?
হ্যাঁ, পার্কে সময় সময় বিশেষ উৎসব এবং ইভেন্ট আয়োজন করা হয়। বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে আরও আনন্দঘন পরিবেশ থাকে।
১০. পার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন?
পার্কে নিরাপত্তার জন্য গেটের কাছে সিকিউরিটি গার্ড, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মেডিকেল সেবা সহ সকল সুবিধা রয়েছে।
১১. পার্কে কি ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যায়?
পার্কের কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যায়, তবে পুরো পার্কে ওয়াই-ফাই সুবিধা নেই।
১২. পার্কে প্রবেশের আগে কি কিছু স্পেশাল প্রস্তুতি নিতে হবে?
গরমে ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকার জন্য পানির বোতল এবং সানস্ক্রিন নিতে ভুলবেন না।
১৩. পার্কে কি হোটেল রয়েছে?
পার্কের আশেপাশে বেশ কিছু হোটেল রয়েছে যেখানে আপনি রাত যাপন করতে পারবেন, যেমন ‘গাজীপুর সিটি হোটেল’, ‘অ্যাম্বাসেডর হোটেল’ ইত্যাদি।
১৪. পার্কের ওয়াটার রাইডে কি সুরক্ষা ব্যবস্থা আছে?
হ্যাঁ, পার্কের সকল ওয়াটার রাইডে সুরক্ষা গার্ড রয়েছে, এবং রাইড শুরুর আগে সবার নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া হয়।
১৫. পার্কে খাবারের দাম কি বেশি?
পার্কের খাবারের দাম কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে পার্কের বাইরের খাবারের দোকান থেকে সস্তায় কিছু খাবার নেওয়া যেতে পারে।
১৬. ড্রিম হলিডে পার্কের প্রবেশের সময় কি কিছু কাস্টম রুলস আছে?
পার্কে প্রবেশের সময় অ্যালকোহল বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ সামগ্রী নেওয়া নিষেধ। নিরাপত্তা চেকিং-এর জন্য আপনার ব্যাগ চেক করা হতে পারে।
১৭. পার্কে কতটা সময় কাটানো উপযুক্ত?
আপনি যদি সব রাইড ও সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে চান, তবে পুরো দিন কাটানো সবচেয়ে ভালো।
১৮. পার্কে কি কোনো ড্রেস কোড আছে?
হ্যাঁ, পার্কে ওয়াটার রাইডে অংশগ্রহণের জন্য সুইমওয়্যার প্রয়োজন এবং অন্যান্য রাইডের জন্য আরামদায়ক পোশাক পরা উত্তম।
১৯. ড্রিম হলিডে পার্ক নরসিংদী এসে কি প্রাইভেট গাইড পাওয়া যায়?
হ্যাঁ, পার্কে প্রাইভেট গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা রয়েছে, যারা আপনাকে রাইড এবং অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে সাহায্য করতে পারে।
২০. পার্কে কি কিছু সীমিত প্রবেশযোগ্য রাইড বা সেবা আছে?
হ্যাঁ, কিছু রাইড বা সেবা বিশেষ সময় বা ঋতুর উপর নির্ভর করে সীমিত থাকতে পারে। আগেভাগে জানিয়ে রাখা ভালো।
২১. ড্রোন উড়ানো কি পার্কে অনুমোদিত?
ড্রোন উড়ানোর অনুমতি নির্দিষ্ট এলাকা বা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। অবশ্যই পার্ক কর্তৃপক্ষের সাথে আগে থেকে যোগাযোগ করুন।